কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডিগ্রি আপনাকে চাকরির বাজারে অধিকতর যোগ্য বলে উপস্থাপন করবে। দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা তাত্ত্বিক দক্ষতার পাশাপাশি প্রায়োগিক অভিজ্ঞতাকেও সমানভাবে গুরুত্ব দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন শিল্প ও পেশার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার সেন্টারগুলো শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনের কাজে নিয়োজিত। এসব নানাবিধ সুবিধা আপনাকে চাকরির জন্য যোগ্য করে তুলবে।
কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ২-টা লেভেল:
১. আন্ডার গ্রাজুয়েট (ব্যাচেলর ডিগ্রি)
২. পোষ্ট গ্রাড (মাষ্টারস এবং পি এইচ ডি)
১। ফল (সেপ্টেম্বর- ডিসেম্বর)
এটাকেই একাডেমিক ইয়ার-এর (শিক্ষা বর্ষের) শুরু ধরা হয়। সাধারণত সব ছাত্র ছাত্রীকে এই সেমিস্টারে ভর্তি করা হয়। ভর্তির আবেদন-এর সময় বিশ্ববিদ্যালয় অনুসারে আলাদা। সাধারণত আন্ডার গ্রাড লেভেল-এ জুন-এর দিকে এবং পোস্ট গ্রাড লেভেল-এ মার্চ-এপ্রিল-এর দিকে। উলেখ্য, ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করাই ভাল।
২। উইন্টার (জানুয়ারী-এপ্রিল)
আন্ডার গ্রাড লেভেল-এ অনেকেই উইন্টারে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করে। পোস্ট গ্রাডে এই সেমিস্টারে খুব বেশী নতুন শিক্ষার্থী নেয়া হয় না। তারপরেও চেষ্টা করতে পারেন। ভর্তির শেষ সময় অগাস্ট থেকে সেপ্টেম্বর-এর মধ্যে।
৩। সামার (মে- অগাষ্ট)
এই সময় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর ছুটি থাকে। বিশেষ করে যারা আন্ডার গ্রাড লেভেল-এ পড়ে। পোস্টগ্রাড-দের গবেষণা অথবা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। উলেখ্য বেশীর ভাগ ছাত্র ছাত্রী যারা এখানে বাংলাদেশ থেকে পোস্ট গ্রাড লেভেল-এ পড়তে আসে, তারা রিসার্চ ফান্ড থেকে সাহায্য পায়- বিনিময়ে অধ্যাপক ইচ্ছামত খাটিয়ে নেন।
আ্যপ্লাই করার শেষ সময় ইউনিভার্সিটিভেদে আলাদা হয়। তবে সাধারণত ফল সেশনের জন্য সেই বছরের জানুয়ারী বা কোন কোন ক্ষেত্রে আগের বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সব ডকুমেন্ট নির্ধারিত ঠিকানায় পাঠাতে হয়। যেমন আপনি যদি ২০২০ এর ফল এ ভর্তি হতে চান তাহলে ২০২০ এর জানুয়ারী বা এ বছরের (২০১৯) ডিসেম্বর নাগাদ আপনার আ্যপ্লিকেশন ফরমস, ফি, ল্যাংগুয়েজ স্কোর, রেকমেন্ডেশন লেটার ইত্যাদি পাঠাতে হবে। সাধারণত টোফল / আই ই এল টি এস এর স্কোর পেতে ১৫ দিন থেকে দেড়মাস সময় লাগে। তাই নভেম্বরের শেষ অথবা ডিসেম্বরের শুরুর মধ্যে অবশ্যই এসব পরীক্ষা দিয়ে ফেলা উচিৎ। অনেক সময় পোস্টাল ডেলিভারির ভুলের কারণে দরকারী কাগজপত্র সময়মত পৌঁছায় না বা হারিয়ে যায়। তাই আ্যপ্লাই করার পর ইউনিভার্সিটির সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হতে হবে যে তারা আপনার সম্পূর্ণ আ্যপ্লিকেশন হাতে পেয়েছে। তারা কিন্তু নিজেরা আপনাকে জানাবে না যে আপনার টোফল / আই ই এল টি এস স্কোর তারা পায়নি। সেক্ষেত্রে আপনার অসম্পূর্ণ আ্যপ্লিকেশন তারা বিবেচনা করবে না। অনেক সময় কাগজপত্র দেরীতে পৌঁছুলে তারা দেরীতেই আপনার ফাইল প্রসেস করবে। তবে সেক্ষেত্রে স্কলারশীপ বা অন্যান্য ফান্ডিং পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবেনা অথবা কমে যায়। আর স্কলারশীপ না দিতে পারলে আপনাকে ওরা আ্যডমিশনও দেবেনা তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়।
কানাডার শিক্ষার সবচেয়ে উলেখযোগ্য দিক হল এদের মান প্রায় সমান। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারী কিন্তু স্বায়ত্ব শাসিত। যে বিশ্ববিদ্যালয় যে প্রোগ্রাম অফার করে, তার ভাল অবকাঠামো আছে। তাই কানাডার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-এর রেংকিং নিয়ে অনেকের দ্বিমত, ত্রিমত আছে। তাই আমি বলব কানাডায় পড়ার জন্য রেংকিং না দেখে অন্যান্য কিছু বিষয় দেখলে অনেক লাভবান হবেন। এগুলো নিয়ে পরে বলছি। এখানে বেশির ভাগ প্রোগ্রাম সেন্ট্রাল-লি কন্ট্রল করা হয়- বোর্ড এর মাধ্যমে। প্রকৌশল বিভাগ প্রত্যেক প্রভিন্স-এ (প্রভিন্স গুলো ইউ এস এ-র স্টেট-এর মত স্বায়ত্ব শাসিত) একটি বোর্ড দিয়ে কন্ট্রল করা হয়। অন্যান্য বিষয় কম বেশী তাই।
টিউশন ফি:
কানাডার সব বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি একই রকম হয় না। অঞ্চল ও পড়ানোর প্রোগ্রামভেদে টিউশন ফিও ভিন্ন ভিন্ন হয়। স্থানীয় শিক্ষার্থীদের তুলনায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর টিউশন ফি বেশি হয়। আন্ডারর্গ্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য খরচ পড়বে ১৭ থেকে ২০ হাজার ইউএস ডলার বা প্রায় ১৩,৫০,০০০ থেকে ১৬,০০,০০০ টাকা। র্গ্যাজুয়েট, ডক্টরাল ও অ্যাসোসিয়েট ডিগ্রির জন্য খরচ পড়বে ১২ হাজার ৫০০ থেকে ২০ হাজার ইউএস ডলার বা প্রায় ১০,০০,০০০ থেকে ১৬,০০,০০০ টাকা।
প্রতি একাডেমিক ইয়ার-এ বিশ্ববিদ্যালয় ফি বাবদ খরচ প্রায় ১৫,০০০ থেকে ২৮,০০০ কানাডিয়ান ডলার পর্যন্ত। ইমিগ্রেন্ট বা সিটিজেন-দের জন্য এ খরচ ৪,০০০ থেকে ৭,৫০০ ডলার পর্যন্ত। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার আরো অনেক কম বেতন (৮-১৪ হাজার ডলার)। সাধারণত এসব বিশ্ববিদ্যালয় একটু ছোট শহরে অবস্থিত হয়। তাই ক্যারিয়ার-এর দিকে সুবিধা কম থাকে। কিন্তু ভাল দিক হল খরচ অনেক কমে যায়।
থাকা খাওয়ার খরচ ডর্মে:
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস-এ থাকতে হলে ডর্মে (বাংলাদেশে হল-এর অনুরূপ) থাকতে হবে। খরচ হবে প্রতি চারমাসে ৩,০০০ থেকে ৭,০০০ ডলার (বা প্রায় ২৪,০০০ থেকে ৫৬,০০০ টাকা) পর্যন্ত- সুযোগ সুবিধার উপর ভিত্তি করে। মিল প্লান-এ আলাদা ভাবে কিনতে হবে- ডর্মে থাকলে সেটা সাধারণত বাধ্যতা মূলক। ডর্মে থাকা বাঙ্গালী শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল খাওয়া। মোদ্দা কথা ডর্মে থাকা অনেক ব্যয়বহুল- কিন্তু ঝামেলা মুক্ত।
থাকা খাওয়ার খরচ ক্যাম্পাসের বাইরে:
যারা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন তাদের খরচ একজনের জন্য এরকম হয়। বাসা ভাড়া: ২৫০- ৮০০ ডলার (বা প্রায় ২০,০০০ থেকে ৬৪,০০০ টাকা) শেয়ার করে থাকলে কম খরচ।
খাওয়া: বাসায় রান্না করলে ১০০-২০০ ডলার; বাইরে খেলে: ৩০০-৬০০ ডলার, ফোন এবং ইন্টারনেট শেয়ার করলে খরচ অনেক কমে যায়। কমপক্ষে ৫০-১০০ ডলার ধরে রাখুন। (উলেখ্য: শহর থেকে শহর-এ আলাদা হতে পারে। আপনার থাকার উপর-ও নির্ভর করে)
(উপরের খরচ একজনের মোটামুটি থাকার মত খরচ)
কানাডায় শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ আছে। সপ্তাহে একজন শিক্ষার্থী ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। শিক্ষক সহকারী, বিক্রয়কর্মী, ফুড ক্যাটারিং, গবেষণা সহকারী, কম্পিউটার ওয়ার্কসহ বিভিন্ন খণ্ডকালীন কাজ শিক্ষার্থীরা করতে পারেন। আন্ডারগ্রাড-দের জন্য কানাডায় খুব বেশি সুবিধা নেই। অল্প কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এই লেভেল-এ স্কলারশিপ দেয়; যা মূল খরচ-এর চেয়ে অনেক কম। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়- যারা বেশী বেতন রাখে তারা স্কলারশিপ দিয়ে রেগুলার বেতন-এর সমান করে দেয়ার মত সৌজন্য দেখায়। ভাল রেজাল্ট করলে ছোট খাট কিছু স্কলারশিপ পাওয়া যায়। একাধিক স্কলারশিপ পেলে চাপ অনেক কমে যায়- যা পাওয়া অনেক কঠিন। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়-এর পলিসি-তে বলাই থাকে শুধু মাত্র আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রী হওয়ার কারণে আপনি কোন স্কলারশিপ পেতে পারবেন না। এটা চেক করা গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে কিছু প্রোগ্রাম-এ কো-ওপ নামে একটি অপশন অফার করে। এটি অনেকটা ইন্টার্নশিপ-এর মত। তবে কোম্পানীগুলো পে করে এবং বেশ ভাল অঙ্কের। তবে কো-অপ-এ ঢুকতে হলে অনেক ভাল সিজিপিএ লাগে- একটি অতিরিক্ত কোর্স এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরীক্ষা দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়-কে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় ফি বাবদ- তবে যা আসে তা অনেক সাহায্য করে।
এ ছাড়াও অফ ক্যাম্পাস ওয়ার্ক পারমিট-এর সুবিধা আছে। এই সুবিধা পেতে অবশ্য প্রায় এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। ৬ মাস ফুল টাইম পড়া শুনার পরে আপনি এপ্লাই করতে পারবেন, কিন্তু কাগজ যোগাড় করতে সময় লাগায় মোট ৭-৮ মাস লেগে যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশ-কে সন্দেহজনক দেশ-এর তালিকায় যুক্ত করায় প্রসেসিং সময় ১৫ দিনের বদলে কমপক্ষে ৩ মাস লাগে। সব মিলিয়ে প্রায় এক বছর অপেক্ষা করতে হবে কাজ করার পারমিশন এর জন্য। এর আগে ক্যাম্পাসের বাইরে কাজ করা অবৈধ। তার আগে এবং পরে অন ক্যাম্পাসে ২০ ঘন্টা কাজ করতে পারেন যা পাওয়ার সম্ভাবনা শুরুর দিকে খুবই ক্ষীণ। অফ/অন ক্যাম্পাস কাজ করে থাকা খাওয়ার খরচ তোলে সম্ভব। যেসব শিক্ষার্থীর পরিবার কমপক্ষে পুরো ৩ বছরের টিউশন ফি + প্রথম বছরের থাকার খরচ দেয়ার মত টাকা দিতে সক্ষম শুধু তাদের কানাডায় আন্ডারগ্রাড আবেদন করা উচিত। কেননা? কানাডা-তে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পণ্যের মত দেখা হয়। কানাডা-র জাতীয় রপ্তানীর একটি বড় অংশ হল শিক্ষা। এখানকার ব্যবস্থা এমন ভাবে করে রাখা আছে যে আপনি কোন আর্থিক সমস্যায় পড়লে সাহায্য করার কেউ নেই। আবার টাকার অভাবে ক্লাস না করলে আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট দিবেনা। তাই সবদিক থেকে বিপদ। একবার এরকম অবস্থায় পড়লে তা থেকে বের হওয়া কঠিন- অনেকটাই অসম্ভব। এখানেও আপনাকে সহজে ইমিগ্রেশন-ও দিবেনা। যদি আর্থিক সঙ্গতি না থাকে তাহলে বাংলাদেশে ব্যাচেলরস শেষ করে তবে পোস্ট গ্রাড-এ আবেদন করা উচিত।
পাস্টগ্রাড লেভেল-এর সুবিধা:
সাধারণত এই লেভেল-এ আসা সব ছাত্র ছাত্রী স্কলারশিপ এবং বিভিন্ন ফান্ডিং-এ আসে। টিএ (টিচিং এসিস্টেন্ট- ছাত্র ছাত্রীদের বিশেষ করে আন্ডার গ্রাড-দের সাহায্য করা), আর এ (রিসার্চ এসিস্টেন্ট- গবেষণায় সাহাযয় করা) এবং বৃত্তির টাকা মিলে সাধারণত যে টাকা অফার করে তাতে একা হলে নিজের টিউশন ফি, থাকা খাওয়ার খরচ-এর পরেও বাসায় টাকা পাঠাতে পারবেন। তবে ভর্তি অনেক প্রতিযোগিতা মূলক। শর্ত একটাই- এভারেজ সাধারণত এ- রাখতে হবে। এর চেয়ে কমে গেলে বেতন আবার পুরোটা দিতে হবে আপনাকে। তাই এই কথাটি মাথায় রেখে মন দিয়ে পড়লে আশা করি কোন সমস্যা হবেনা। আর যারা সামর্থ রাখেন খরচ করার কিন্ত রেজাল্ট ভাল নেই তারা নিজ খরচে আসতে পারেন।
কম্পিউটার সায়েন্স, বায়োলজি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ফুড সায়েন্স, কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড রিসোর্সেস, ইলেকট্রনিক্স, মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সার্ভিসেস, মেরিন অ্যাফেয়ার্স, এগ্রিকালচার, ইকোনোমিক্স, অ্যাপ্লায়েড কম্পিউটার সায়েন্স, ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট, অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাসট্রোনমি, অ্যাপ্লায়েড জিওগ্রাফি, আর্কিটেকচারাল সায়েন্স, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, এডুকেশন, হোম ইকোনোমিক্স, মিউজিক, ফিলোসফি, হিস্ট্রি অ্যান্ড রিলিজিওন, ইংলিশ, ল, থিয়েটারসহ আন্ডার র্গ্যাজুয়েট পর্যায়ে প্রায় দশ হাজার বিষয় এবং পোস্ট র্গ্যাজুয়েট পর্যায়ে প্রায় তিন হাজার বিষয় পড়তে পারবেন।
আন্ডারর্গ্যাজুয়েট পর্যায়ে ভর্তির জন্য কমপক্ষে ১২ বছরের শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগবে। ইংরেজি ও ফরাসি দুটি ভাষাতেই কানাডার প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করা যায়। একজন শিক্ষার্থী এই দুটোর যেকোনো একটি ভাষায় পড়তে পারবেন। ইংরেজি ভাষার প্রতিষ্ঠানগুলো ভাষাগত যোগ্যতা হিসেবে টোয়েফল, আইইএলটিএস প্রাধান্য দেয়। টোফেলের আইবিটি স্কোর থাকতে হবে ন্যূনতম ৭৫। তবে ১০০-এর বেশি নম্বর পেলে ভালো। অন্যদিকে যারা IELTS করেছেন, তাদের জন্য স্কোর প্রয়োজন ন্যূনতম ৬.০০। ভাষাগত যোগ্যতা ছাড়াও কিছু প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। তবে এ ক্ষেত্রে ভর্তির পর প্রতিষ্ঠানে ভাষার ওপর ESL (English Second Language) মৌলিক কোর্স করতে হবে। ফ্রেঞ্চ ভাষার প্রতিষ্ঠানে পড়তে চাইলে ওই প্রতিষ্ঠানে ফ্রেঞ্চ ভাষার ওপর লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়। এটি তারা নিজস্ব নিয়মে নিয়ে থাকে।
কানাডায় পড়ালেখার জন্য শক্ত পৃষ্ঠপোষক (Sponsor) দেখাতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীকে তাঁর পৃষ্ঠপোষকের (Sponsor) ন্যূনতম ৩০ লাখ টাকা ব্যাংক হিসাব দেখাতে হবে এবং এই টাকা ন্যূনতম ৬ মাস থেকে এক বছর ব্যাংকে থাকতে হবে।
মাস্টার্স লেভেলে ভর্তির জন্য বাংলাদেশী স্টুডেন্টদের ১৬ বছরের শিক্ষা অভিজ্ঞতা দরকার। সে অর্থে ইন্টারমিডিয়েটের পরে চার বছর মেয়াদী অনার্স থাকাই যথেষ্ট। অনেক ইউনিভার্সিটিতেই ল্যাংগুয়েজ প্রফিসিয়েন্সি পরীক্ষা যেমন টোফল / আই ই এল টি এস বাধ্যতামূলক। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এ নিয়ম তারা শিথিল করে থাকে। কানাডায় দুই একটি বাদে কোন ইউনিভার্সিটিতেই জি আর ই স্কোর প্রয়োজন হয়না অর্থাৎ জি আর ই স্কোর তারা বিবেচনা করেনা।
রেকমেন্ডশন লেটার:
আর একটি দরকারী জিনিস হল রেকমেন্ডশন লেটার। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এই সব রেকমেন্ডশন লেটার পড়ে। রেকমেন্ডশন লেটার হল আপনার একাডেমিক এবং গবেষণা করার যোগ্যতা মূল্যায়ন সম্পর্কিত একটি পত্র যা সাধারণত আপনার কাজের সাথে পরিচিত প্রফেসর দিতে পারেন। এর জন্য ইউনিভার্সিটিগুলোর নিজস্ব ফরম রয়েছে। তবে তার সাথে প্রফেসরদের লেটারহেড-এ আলাদা করে একটি চিঠি পাঠানো ভাল। সাধারণত ২-৩টি লেটার দরকার হয়। ভাল রেকমেন্ডশন লেটার না হলে ভর্তির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
স্টেটমেন্ড অব ইন্টারেস্ট বা প্ল্যান অব স্টাডি:
অনেক সময় আ্যপ্লিকেশন প্যাকেজে স্টেটমেন্ড অব ইন্টারেস্ট বা প্ল্যান অব স্টাডি লিখতে হয়। এটি আন্ডারর্গ্যাজুয়েট পর্যায়ে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও মাস্টার্স এবং পি এইচ ডি’ও লেভেল-এর জন্য খুবই দরকারী। আপনি মাস্টার্স আ্যপ্লিক্যান্ট হলে তারা দেখতে চায় আপনার রিসার্চ ইন্টারেস্ট কোনদিকে। কোন স্পেসিফিক একটা এরিয়াতে ফোকাস না করে কয়েকটি এরিয়াতে ইন্টারেস্ট দেখানো আমার মনে হয় ভাল। তবে ডিপার্টমেন্টের প্রফেসরদের ওয়েবসাইট দেখে সে মোতাবেক একটা প্ল্যান তৈরী করা উচিৎ।
আপনি যেই প্রোগ্রাম নির্বাচন করেছেন সেই প্রোগ্রামের অ্যাডভাইজার / ডিনকে মেইল করুন। উনাদের জানান আপনার পড়ার আগ্রহের কথা। অভিজ্ঞতার আলোক বলতে পারি তারা আপনার একটা মেইল পেয়েই যে উত্তর দিয়ে দিবে এমনটি ভাবা বোকামী। আপনি তাই তাদের একটা মেইল দেয়ার পর ২/৩ দিন অপেক্ষা করে আবার মেইল পাঠান। দেখা যাবে যে আপনি ২০ টা মেইল দিলে তারা আপনাকে ১ / ২ টা মেইলের উত্তর দিবে। তাদের কাছে মেইল করে আপনি উক্ত প্রোগ্রামের আদ্যপান্ত জেনে নিন। তারা আপনাকে তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে যাবেন।
আর্থিকভাবে সচ্ছল শিক্ষার্থীরা কানাডাতে পড়াশোনা করার সুযোগ তো পাচ্ছেই। সেই সাথে যারা অসচ্ছল তাদের জন্যও রয়েছে বিভিন্ন স্কলারশিপের ব্যবস্থা। অর্থনৈতিক কারণে যেন কারও উচ্চশিক্ষা বাধাগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে কানাডার সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সচেতন।
কানাডার প্রধান প্রধান স্কলারশিপগুলো হলোঃ
ভেনিয়ার কানাডা গ্রাজুয়েট স্কলারশিপ:
কানাডায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক এমন শিক্ষার্থীদের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয় বৃত্তি এটি। কানাডার সরকার এই বৃত্তি দিয়ে থাকে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে বছরে ৫০ হাজার কানাডীয় ডলার দেওয়া হয়। মেয়াদ তিন বছর। সাধারণত পিএইচডি গবেষণার জন্য এই বৃত্তি দেওয়া হয়।
আইডিআরসি ডক্টরাল রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড:
এই বৃত্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পায়। প্রতিবছরই এই বৃত্তি প্রদান করা হয়।
ভিজিটিং ফেলোশিপ ইন কানাডিয়ান গভমেন্ট ল্যাবরেটরিজএই ফেলোশিপ প্রোগ্রাম উন্নয়নশীল দেশের তরুণ বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের কানাডার গভর্মেন্ট ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সুবর্ণ সুযোগ করে দেয়।
এ ছাড়া আরও কিছু জনপ্রিয় স্কলারশিপ প্রোগ্রাম হলো-
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পোস্ট গ্রাজুয়েট স্কলারশিপ প্রোগ্রাম
ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইন্টার্নশিপ (আইআরডিআই) প্রোগ্রাম ও
রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট প্রোগ্রাম।
কানাডার ভিসা আবেদনের জন্য আপনি VFS-canada ওয়েব সাইটে যাবতীয় তথ্য পাবেন। প্রয়োজনে AXIOM ফোন করে কিংবা অফিসে গিয়ে বিস্তারিত জেনে আসুন। AXIOM আপনাকে লেটেস্ট তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে। কানাডাতে যদি আপনার কোন আত্মীয় বা ভাই / বোন কেউ থাকে তাহলে তাদেরকে আপনি স্পন্সর হিসেবে দেখাবেন না। এতে করে কানাডার ভিসা পাওয়া আপনার জন্য কঠিন হয়ে যেতে পারে। যিনি আপনাকে স্পন্সর করবেন উনার চাকরি / ব্যবসা সঙ্গক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, জমি জমার হিসেব, ব্যাংক ব্যালেন্স, ব্যাংক স্টেটমেন্ট এসগুলো আপনার ভিসা প্রসেস করতে লাগবে। আপনার প্রোগ্রাম যদি ২ বছরের জন্য হয় তাহলে ১ বছরের ব্যাংক হিসেব দেখাতে হবে। লেটেস্ট তথ্যের জন্য এই ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।
বিশ্বের স্বনামধন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকার একটি বিরাট অংশজুড়ে থাকে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দেশটিতে রয়েছেঃ
১। ইউনিভার্সিটি অব ভিক্টরিয়া
২। ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি
৩। ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া
৪। ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো ও
৫। কুইনস ইউনিভার্সিটি
ইত্যাদির মতো সব নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ প্রকাশিত বিশ্ব-র্যাংকিং অনুযায়ী ৯০ শতাংশের বেশি কানাডিয়ান রিসার্চ স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বনামধন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও ক্যারিয়ার গঠনে যা বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে।
কানাডার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজ এর নাম এবং শহর লিস্ট ডাউনলোড করুন।
Top Universities in Canada
2019 Canadian University Ranking Download List with city
আগে ঠিক করুন আপনি কি করতে যেতে যাচ্ছেন কানাডা। আন্ডার গ্রাজুয়েট (ব্যাচেলর ডিগ্রি), মাষ্টার্স নাকি ডিপ্লোমা? কয় বছরের কোর্স করতে যেতে চান। এখানে বলে রাখা ভাল যে ডিপ্লোমা কিংবা সার্টিফিকেট প্রোগ্রামের জন্য বাংলাদেশ থেকে ভিসা সাধারণত দেয়া হয় না। মূলত এগুলো লং প্রোগ্রাম নয় বলেই হয়তো এমন। সাধারণত কানাডায় মাষ্টার্স ২ বছর মেয়াদী। আর তাই ভেবে চিন্তে ডিসিশন নিন।
বিশ্ববিদ্যালয় / কলেজ নির্বাচন:
এখানে আপনাকে অবশ্যই প্রভিন্স এবং শহর দুটোকেই প্রাধান্য দিতে হবে। তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন যে হয়ত আপনি কোন প্রভিন্সেই আপনার মনের মত শতভাগ কিছু পাবেন না। হয়ত দেখা যাবে আপনি যেই সাবজেক্টে পড়তে যেতে চান সেই সাবজেক্টে পড়ার খরচ অনেক বেশি। কিংবা যেই প্রভিন্স এ যেতে চান সেখানে আপনার যাওয়ার ইচ্ছে নেই। তাই বলে হতাশ হবেন না। এসব নিয়ে চিন্তা না করাই ভাল।
অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসিং:
আপনার ইচ্ছে সামার (মে- অগাষ্ট) সেশন ধরার। আর আপনি যদি ডিসেম্বর / জানুয়ারিতে সব কাগজপত্র জমা দেন তাহলে ধরে নিন আপনি সামার সেশন ধরতে পারবেন না। সব কাগজপত্র জমার পর অফার লেটার আসে প্রায় ৩ মাস পর। যাই হোক, কমপক্ষে ৬/৭ মাস আপনার হাতে রেখে তারপর সব কাগজপত্র পাঠান। মনে রাখবেন বাংলাদেশ থেকে ভিসা পেতে আপনার প্রায় ২ মাস সময় লাগবে। আর তাই অফার লেটার আপনার হাতে আসার ১ সপ্তাহের মধ্যেই ভিসার কাগজপত্র জমা দেয়াটা ভাল।
ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধা
বাংলাদেশে থেকে কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া কানাডায় এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রেডিট ট্রান্সফার করা যায়। র্গ্যাজুয়েট ও আন্ডারর্গ্যাজুয়েট পর্যায়েই মূলত ক্রেডিট ট্রান্সফার হয়। তবে ক্রেডিট ট্রান্সফার কত শতাংশ পর্যন্ত করা যাবে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শর্তারোপ করে।
স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডার কথা যদি বিবেচনা করে থাকেন তাহলে কিছু কিছু বিষয় আপনাকে লক্ষ রাখতে হবে। যারা স্কলারশীপ নিয়ে যাবেন তাদের কথা ভিন্ন তবে যারা নিজের ফান্ডিং নিয়ে পড়তে চান তাদের জন্য একটু সমস্যা বৈকি। কারণ কানাডা আসার পর প্রথম ৬ মাস আপনি কোন অফ ক্যাম্পাস চাকরি করতে পারবেন না। অন ক্যাম্পাস চাকরি করা যাবে। তবে ক্যাম্পাসে চাকরি পাওয়াটা একটু সময়ের ব্যপার। যেমন অনেক সময় দেখা গেল যে চাকরির নোটিশ দেয়া হয়েছে কিন্তু হঠাৎ করেই দেখা গেল অ্যাপ্লিকেশন জমা নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করা যায় এবং তা সহজলভ্য। তবে আপনার যদি মাগনা খাটার মন মানসিকতা থাকে তাহলে তা করতে পারেন। যারা স্কলারশীপ বা ফান্ডিং পেয়ে পড়তে আসেন তারা সাধারণত বাহিরে কোথাও কাজ করার অনুমতি পান না তার ফ্যাকাল্টির কাছ থেকে। অফ ক্যাম্পাস কোন চাকরি করতে হলে তাকে না জানিয়ে করতে হয় এখানে। আর কোনমতে যদি জেনে যান ফ্যাকাল্টি তাহলে ফান্ডিং কমিয়ে দিতে পারেন উনি। যারা নিজের ফান্ডিং নিয়ে পড়তে আসেন তারা সাধারণত চান যে বিষয়ে পড়তে আসছেন সেই বিষয়ের কিছু কোর্সে যদি ক্রেডিট ট্রান্সফার করা যায় তাহলে খুব ভাল হয়। আপনাদের এখানে জানিয়ে রাখা ভাল যে এই কাজ করে নিজের পায়ে কুড়াল মারার চেয়ে না মারাই ভাল। কারণ আপনি নিশ্চিত থাকুন যে ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে চাইলেও আপনাকে কানাডার ইউনিভার্সিটি থেকে দিবে না। তারা আপনাকে উক্ত কোর্সের জন্য অ্যাডভান্স স্ট্যান্ডিং করার অফার করবে। যা আপনি মেনে না নিলেও কিছু করার নেই। করতেই হবে আপনাকে। কানাডার নিয়ম কানুন অনেক কড়া। এখানে নিয়ম ভাঙ্গলে জেল জরিমানা কিংবা দেশে পাঠিয়ে দেয়া এসবের নজির ও আছে। এমন অনেক ছাত্র আছে যারা ৬ মাস পুরণ হওয়ার আগেই অফ ক্যাম্পাস চাকরি শুরু করে দেয়। সাবধান! এটা করলে আপনার বিশাল সমস্যা হবে। একবার যদি ধরা পরেন তাহলে ক্ষতি আপনারই হবে।
আপনার পড়াশোনার যাবতীয় খরচ (স্পন্সর) যিনি বহন করবেন উনি কানাডায় যদি অবস্থান করেন তাহলে তাকে স্পন্সর হিসেবে নিন। ইন্টারভিউ দিয়ে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে।
কানাডিয়ান হাই কমিশনের ঠিকানা:
High Commission of Canada
United Nations Road
Baridhara, Dhaka-1212, Bangladesh
Telephone: +880 2 988 7091 to 988 7097
Fax: +880 2 882 3043 & +880 2 882 6585
Email: [email protected]
www.vfs-canada.com.bd