ফান্ডিং কিভাবে জোগাড় করতে হয়?
ফান্ডিং কিভাবে জোগাড় করতে হয়?
বিদেশে পড়তে চাইলে একটা টেনশন থাকে সেটা হলো টিউশন পে করা যাবে কিভাবে?
বাইরে এ ব্যাপারে সুযোগের অভাব নেই। ইউনিভার্সিটিগুলোতে টিচিং , রিসার্চ, গ্রাজুয়েট এসিসটেন্টশীপ মেলা তেমন দুষ্কর নয়। তার উপর আছে ঘন্টাচুক্তিতে চাকুরী, বাইরে বিভিন্ন দোকানে চাকুরী। আর প্রোগ্রামীং বা ওয়েব ডেভলপমেন্টের কাজ জানা থাকলে তো ‘লারে লা পা পা’। টিচিং এসিসটেন্টদেরকে বিভিন্ন কোর্সের খাতা দেখা, ছাত্রদের সাহায্য করার কাজ করতে হয়। রিসার্চ এসিসটেন্টদেরকে কোন প্রফেসরের আওতায় কোন গবেষনা সাহায্য করতে হয়। এই দুইধরনের কাজে ইউনিভার্সিটি থেকে টিউশন পুরোটা দিয়ে দেয়, আর থাকা খাওয়ার জন্য মাসে বারশ থেকে পনেরশ ডলার বেতন। তবে বিভিন্ন দোকানে চাকুরীটা সত্যিই খুব কষ্টকর এবং আমাদের বাঙ্গালী মানসিকতার উপর বড় ধকল।
আরেকটা ব্যাপার হলো আন্ডারর্গ্যাজুয়েট পড়তে আসলে কিন্তু এইসব চাকুরী মেলা প্রায় অসম্ভব। তাই এক্ষেত্রে বেশীরভাগকে বাইরে ঘন্টা চুক্তির কাজ করতে হয়। কিন্তু মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে আসলে এসব ফান্ডিং পাওয়া বেশ সহজ হয়ে যায়। তাই যত বড় ডিগ্রীতে এনরোল করবেন তত সুযোগ বেশী। গবেষনা, বা সাধারন পড়াশোনা এত বাস্তব কাজের সাথে স¤পৃক্ত যে চাকুরীর ক্ষেত্রে কোন অসুবিধাই হয়না। যে সমস্ত বিষয়ের বাস্তব এপ্লিকেশন নেই সেসব জিনিস এরা সিলেবাস থেকে কবেই বের করে দিয়েছে! এব্যাপারে একজন প্রফেসরের একটা কথা মনে পড়ল। তিনি বলছিলেন, ‘আমরা এখানে শিক্ষা প্রদান করি না, শিক্ষা বিক্রী করি। তাই যারা শিক্ষা কিনছে তারা যেন না ঠকে সেটা আমাদের দেখতে হয়।
বিদেশে ছাত্র- ছাত্রীরা [মার্স্টাস বা পিএইচডি ] মূলত চারভাবে টিউশন এবং থাকা খাওয়ার খরচ জোগাড় করে থাকে।
১। টিচিং এসিসট্যান্টশীপ।
২। রিসার্চ এসিসট্যান্টশীপ।
৩। ইউনিভার্সিটিতে ঘন্টাভিত্তিক কাজ।
৪। ইউনিভার্সিটির বাইরে ঘন্টাভিত্তিক কাজ।
প্রতিটি পদ্ধতির ভাল-মন্দ দিক আর কিভাবে যোগাড় করতে হয় সেটা আলোচনা করব এবারে।
টিচিং এসিসট্যান্টশীপ
টিচিং এসিসট্যান্টশীপ ব্যাপারটা নির্ভর করে আপনি যে বিষয়ে পড়তে যাবেন সেটার বিভাগীয় প্রধান এবং ভর্তি নির্বাচকের উপর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটাকে ব্যবহার করে ভাল ছাত্র যোগাড় করার টোপ হিসেবে। ধরেন আইআইটির কোন ছেলে একটা মধ্যম ধরনের ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করেছে। সেই ইউনিভার্সিটি তখন তাকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে লোভনীয় অফার পাঠাবে। যাতে সে এখানে পড়তে আসে। তাই এখাতে প্রথমেই আর্থিক সাহায্য আশা করে লাভ নেই। তবে প্রথম সেমিষ্টারে ভালো রেজালট করলে তখন টিচিং এসিসট্যান্ট হিসেবে কিছু আশা করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কোন প্রফেসরের নেক নজরে থাকলেও অনেক কাজ হয়। কিভাবে এই নেক নজর লাভ করা যায় সেটা পরে আলোচনা করব।
টিচিং এসিসট্যান্ট হিসেবে যে কাজগুলো করতে হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো খাতা দেখা। বিভিন্ন কোসে আন্ডারর্গ্যাজুয়েট ছাত্রদের হোমওর্য়া দেয়া হয়। সেগুলোর খাতাগুলো দেখে দিতে হয়। এছাড়া মাঝে মাঝে প্রফেসরের অনুপস্থিতে ক্লাস নিতে হতে পারে, তাই সাধারনত টিএসই (টেস্ট অফ ¯েপাকেন ইংলিশ) নামের একটা পরীক্ষা দিতে হয় অনেক সময়। তাছাড়া ল্যাব ভিত্তিক কোর্সের টি এ হলে ল্যাবে সাহায্য করতে হতে পারে অনেক সময়।
রিসার্চ এসিসট্যান্টশীপ
রিসার্চ এসিসট্যান্টদের কাজ প্রফেসরদের বিভিন্ন গবেষনায় সাহায্য করা। সেইসাথে যে বিষয়ের উপর গবেষনা করছে সেটা তার নিজের গবেষনা পত্র হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। তাই কাজটা মন্দ নয়। তবে রিসার্চের ব্যাপারটাই খটোমটো। উপরন্তু প্রফেসরদের আচার আচরনের উপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। অনেকের জন্য তাই এই কাজটা অতটা পছন্দের নয়।তবে রিসার্চ এসিসট্যান্টশীপ নির্ভর করে স¤পূর্ণ একজন প্রফেসরের উপর। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন বিষয়ে রিসার্চ করবার প্রপোজাল বা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে সে গবেষনা গ্রহন যোগ্য মনে হলে তারা সেই প্রফেসরকে কিছু অর্থ যোগান দেন। সেই অর্থ থেকে কিছু ছাত্রকে রিসার্চ এসিসট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তাই সেই সমস্ত ছাত্রদেরও সবসময় দৌড়ের উপর থাকতে হয়।
রিসার্চ এসিসট্যান্টশীপ পাওয়ার মূল ব্যাপার তাই হচ্ছে কোন প্রফেসরের নেক নজরে থাকা। কিভাবে এই নেকনজরে আসা সম্ভব? প্রথমত ভর্তির আগে থেকেই এব্যাপারে চেষ্টা শুরু করতে হবে। উদাহরন স্বরূপ একটি বিষয় বেছে নিই: মনে করুন আপনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চান। তবে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের রোবোটিক্স বিষয়ে আপনার সবচেয়ে আগ্রহ বেশী। সুতরাং আপনার কাঙ্খিত ইউনিভার্সিটিতে যে প্রফেসর এ বিষয়ে কাজ করছে তাকে খুঁজে বার করলেন ইউনিভার্সিটির ওয়েব পেইজ থেকে। তারপর তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি তার বর্তমান রির্সাচ গুলো ঘাঁটাঘাটি করলেন। তারপর তাকে ইমেইল করুন তার রিসার্চের ব্যাপার জানতে চেয়ে। এব্যাপারে সাবধান – প্রথম ইমেইলে তাকে কোনভাবেই ফান্ডিংয়ের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। আপনার মূল লক্ষ্যা থাকবে রিসার্চের ব্যাপারে আলোচনা করা।
এভাবে প্রাথমিক যোগাযোগ শেষ হলে পরে সুযোগ খুঁজুন আপনার ব্যাপার জানানোর জন্য। অনেকে মুখের উপর না করে দিবে। কিন্তু আপনার কাছে দরকার মনে হলে পরে লেগে থাকতে ভুলবেন না। লেগে থাকা মানে রিসার্চের ব্যাপারে কাজ করে যাওয়া বিশ্বাস স্থাপন করা এসব। অনেক সময় দেশে থেকেই ফোন করে আলাপ করুন। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যদি ক্লাস শুরু করে ফেলেন (অবশ্যই প্রথম সেমিস্টারের টাকা পরিশোধ করে) তাহলে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। তার সাথে সেমস্ত ছাত্ররা কাজ করছে তাদের সাথে কথা বলুন। অন্যান্য ছাত্রদের সাথে যোগাযোগ করুন। মনে রাখবেন যোগাযোগ এই ক্ষেত্রে খুবই ইফেক্টিভ।
ঘন্টা ভিত্তিক কাজ
ইউনিভার্সিটিতে ঘন্টা ভিত্তিক কাজ খুব সুলভ না হলেও মোটামুটি পেতে খুব সমস্যা হয় না। লাইব্রেরীতে বই আদান-প্রদানের কাজ, বিভিন্ন অফিসে টুকটাক সহায়ক কারীর কাজ এধরনের বিভিন্ন কাজ করতে হতে পারে এক্ষেত্রে।
সমস্যা এখানে দুটো:
১। থাকা-খাওয়ার খরচটা উঠে আসলেও টিউশনটা আপনাকেই পরিশোধ করতে হবে।
২। ঘন্টা চুক্তিতে কাজ বলে ঘড়ি ধরে আপনাকে বসে থাকতে হবে অফিসে। তবে কাজ চলে যায় এরকম একটা কাজ পেলেও।
ঘন্টা ভিত্তিক ইউনিভার্সিটির কাজ গুলো অনেক সময় ইউনিভার্সিটির ওয়েবাসইটে পাওয়া যায়, অনেক সময় বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে জানা যায়, আবার অনেক সময় প্রফেসররাও জানাতে পারে। তবে এক্ষেত্রে প্রোগ্রামীং বা ওয়েব ডেভলপমেন্ট জানা থাকলে অনেক সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। তবে আসল পেইন হল বাইরে কাজ করতে যাওয়া। এই কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিভিন্ন পেট্রল পা¤পগুলোতে কাজ করা, বিভিন্ন ফাস্টফুডের দোকানে কাজ করা। এই বাইরের কাজ নিয়ম বর্হিভুত হওয়ায় খুব অল্প দরে কাজ করতে হয়। আর রক্তচোষা মালিক ছিবড়ে ফেলে একবারে। তবুও নিতান্তই দরকার পড়লে এধরনের কাজ পেতে দেশী লোকদের নেটওর্য়াক ব্যবহার করতে পারেন।
SCHOLARSHIP and Funding আরো বেশি জানতে নিচের ছবিতে ক্লিক করুন-