স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই খোঁজখবর রাখতে হবে। যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
পৃথিবীর যেকোনো দেশেই স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর গবেষণা ও নিবন্ধের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যে বিষয়ে পড়ছেন বা গবেষণা করছেন তার ওপর নিবন্ধ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের চেষ্টার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেকেই নিচু মানের জার্নালে নিবন্ধ প্রকাশের চেষ্টা করেন, যা কখনোই করবেন না। এতে ভবিষ্যতে বিপদে পড়বেন, ভর্তি বাতিল হয়ে যেতে পারে। গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা প্রাক্তনীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহায়তা নিন। বিভিন্ন কনফারেন্সে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা, পোস্টার উপস্থাপনের অভিজ্ঞতা ভর্তির কার্যক্রমে ইতিবাচক হিসেবে কাজ করে।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যে বিষয়ে পড়তে যেতে চান, সেই ক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ বা চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে তা ভর্তি ও বৃত্তি পেতে বেশ কার্যকর। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ থেকেই নিজের ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ খুঁজে বের করুন।
সাধারণভাবে স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করতে হয়। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগের ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক ও শিক্ষকদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৃত্তি বা ফান্ডের জন্য আবেদন করা যায়। প্রতিবছর বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ও ফেলোশিপের জন্য অর্থ গ্রহণ করেন শিক্ষকেরা। আগে থেকে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সেই অধ্যাপকের মাধ্যমে বৃত্তি পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে যে বিষয়ে পড়ছেন, কেন সেই বিষয়ে ভবিষ্যতে পড়বেন, যে অধ্যাপক বা শিক্ষককের অধীনে গবেষণা করতে চান, তা বিস্তারিত ই–মেইলে জানাতে হবে।
স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে আবেদনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা যার অধীনে গবেষণা করছেন তাঁর কাছ থেকে সুপারিশপত্র জমা দিতে হবে। সুপারিশকারী যেখানে আবেদন করছেন, সেই কর্তৃপক্ষ বরাবর আপনাকে চেনেন, জানেন, আপনার মেধা ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে ধারণা আছে, এমনটা লিখলে আপনি এগিয়ে থাকবেন।
দেশভেদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টেটমেন্ট অব পারপাজ বা কেন পড়বেন, কোন বিষয়ে গবেষণা করতে চান সে সম্পর্কে লিখে জমা দিতে হয়। অন্যের প্রস্তাব কখনোই অনুকরণ করে জমা দেবেন না। নিজের আগ্রহ, লক্ষ্য ও উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে প্রস্তাব লিখুন।
আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোর বিভিন্ন দেশে ইংরেজি ভাষায় পড়ানো হয় এমন মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে আবেদনের জন্য বাধ্যতামূলক।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে আবেদনের জন্য জিআরই স্কোর বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এমবিএ বা ব্যবসায় অনুষদের কোনো বিষয়ে পড়তে গেলে জিম্যাট স্কোরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অনেক বিজনেস স্কুল এখন জিম্যাটের পাশাপাশি জিআরই স্কোর গ্রহণ করে থাকে। স্কোরভেদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হয়।
যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন ফি জমা দিতে হয়। যেকোনো ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ফি জমা দেওয়া যায়।
ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে নম্বরপত্রের কপি (ট্রান্সক্রিপ্ট) জমা দিতে হয়, যা অবশ্যই ইংরেজি ভাষায় লেখা হতে হবে কিংবা ইংরেজিতে ভাষান্তর করে জমা দিতে হবে। কুরিয়ার করে পাঠাতে হতে পারে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ই–মেইলে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নম্বরপত্র তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে যাচাই করিয়ে নিতে হয়। সাধারণত বাংলাদেশি শিক্ষা বোর্ডের সার্টিফিকেট ও মার্কসসীট বোর্ড থেকে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ ও নম্বরপত্র সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সত্যায়িত করে, পরে শিক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করে নিতে হয়।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সেশনে আবেদন করা যায়। এ ক্ষেত্রে ‘ফল সেমিস্টার’ (আগস্ট থেকে), ‘স্প্রিং সেমিস্টার’ (জানুয়ারি থেকে) ও ‘সামার সেমিস্টার’ (মে থেকে) বিভিন্ন ভাগে আবেদন করা যায়। প্রধানত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ফল সেমিস্টারে আবেদন করতে হয়। যে সেশনেই আবেদন করেন, মনে রাখবেন অন্তত একবছর থেকে আট মাস আগেই আবেদন সমপন্ন হয়ে থাকে।
যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান তার ওয়েবসাইট, ফেসবুক বা ইউটিউব থেকে নানা তথ্য জানা যায়। এক্সিওম নিয়মিত বিদেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য স্পট এডমিশন, সেমিনার ও বিভিন্ন অনলাইন সেশনও পরিচালনা করে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
এই ওয়েবসাইটে নজর রাখুন অথবা আমাদের ফেসবুক পেজ এ যুক্ত থাকুন।