বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা, যোগ্যতা, আবেদন পদ্ধতি ও খরচসহ বিস্তারিত জানা যাবে এ প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটি লিখছেন বি এম নাজির হোসেন সোহেল, সি ই ও, এক্সিওম এডুকেশন এন্ড ইমিগ্রেশন, মালয়েশিয়া ই এম জি এস অনুমোদিত এডুকেশন কনসালট্যান্ট।
মালয়েশিয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ ওপরের দিক আছে। আধুনিক, প্রগতিশীল ও বহুসংস্কৃতির গতিশীল জীবনধারার দেশটি এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে। বর্তমানে ১৪০টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহন করেছে। মালয়েশিয়ায় বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থার ভেতর নিহিত আছে কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ার অর্জনের প্রক্রিয়া ও উন্নত জীবনের হাতছানি। রাজধানী শহর কুয়ালালামপুরকে শিক্ষার্থীরা সাশ্রয়ী শহরের তালিকায় সারাবিশ্ব দ্বিতীয় অবস্থানে রাখেন।
বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ ও নিশ্চয়তা নেই। যে গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে মানসম্মত ও আধুনিক শিক্ষার নিশ্চয়তা দিচ্ছে সেখানে সবার এ্যাডমিশন নেয়ার সুযোগ নেই।
তাই অনেক মধ্যবিত্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এখন বিদেশে উচ্চশিক্ষার কথা ভাবছে, কিন্তু বছরে ২০-২৫ লক্ষ টাকা টিউশন ফি, আবার ভিসার জন্য ৫০-৬০ লক্ষ টাকা ব্যাংক স্পন্সর, এই ই এল টি এস সহ নানা প্রতিবন্দকতা, এসবের পরও ভিসার অনিশ্চয়তা, কিন্তু অল্প টিউশন ফিতে, এই ই এল টি এস ও স্পন্সর ছাড়া ১০০% ভিসার নিশ্চয়তা সহ মালয়েশিয়াই হতে পারে তাদের জন্য উচ্চশিক্ষার সেরা অপশন।
এছাড়া ও মালয়েশিয়া থেকে সহজেই আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটিতে সহজে ক্রেডিট ট্র্যান্সফার করার সুযোগ রয়েছে।
মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচুরসংখ্যক প্রোগ্রাম অফার করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয় এই প্রোগ্রামগুলোয় ভর্তির যোগ্যতা। তবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের যে সাধারণ যোগ্যতাগুলো পূরণ করতে হয়, তা হলো—
● প্রি-ইউনিভার্সিটি ও ডিপ্লোমার জন্য কমপক্ষেএসএসসি / ও-লেভেল।
● ব্যাচেলর বা স্নাতকের জন্য কমপক্ষে এ-লেভেল/ এইচএসসি (সিজিপিএ ন্যূনতম ৩.৫)।
● মাস্টার্স বা স্নাতকোত্তরের জন্য সিজিপিএ–৪–এর মধ্যে ন্যূনতম ২.৫ সহ একটি স্নাতক বা ব্যাচেলর ডিগ্রি (আইইএলটিএস স্কোর ৬ দশমিক ৫ (প্রোগ্রাম ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নির্ভর করে)
ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজনেস, আইটি, মেডিসিন, ডিজাইন, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, নার্সিংসহ প্রায় ৩০০টির বেশি বিষয়ে ফাউন্ডেশন, ডিপ্লোমা, ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পি এইচ ডি করার সুযোগ। এ ছাড়াও আমেরিকা, ইউ কে, অস্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন দেশের নামকরা বিশ্ব বিদ্যালয় ডিগ্রী সরাসরি অনেক কম খরচে করার সুযোগ। এ ক্ষেত্রে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি প্রোগ্রাম (AUP) বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মাঝে খুবই জনপ্রিয়।
মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রামের ভিত্তিতে সাড়ে তিন থেকে চার বছরের স্নাতক অধ্যয়নে খরচ পড়তে পারে ৯ হাজার ৬০০ থেকে ১ লাখ ৩ হাজার ৫০০ মালয়েশিয়ান রিংগিত। ১ রিংগিত সমান ৩০ টাকা। আর এক থেকে দুই বছরের স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে খরচ হতে পারে ৭ হাজার ৫০০ থেকে ১২ হাজার ৭০০ মালয়েশিয়ান রিংগিত।
মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অধ্যয়নের জন্য আবেদন শুরুতেই যে কাজটি করতে হয়, তা হচ্ছে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পছন্দের বিষয়ে পড়ার জন্য আবেদন করা। মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত দুই সময়ে আবেদন গ্রহণ করা হয়ে থাকে—* প্রতিবছরের জুন মাসে আবেদন শুরু হয়। এ আবেদনের সময়সীমা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।* নভেম্বরে, এ আবেদনের সময়সীমা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।প্রথমেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো প্রস্তুত করতে হয়। এগুলো সাধারণত একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক রকম হয়। তার মধ্যে একদম মৌলিক কতগুলো নথিপত্রের একটি তালিকা উল্লেখ করা হলো।
পূরণকৃত আবেদনপত্র।
সকল সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট।
ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড ও ৩৫/৪৫ মিলিমিটার)।
পাসপোর্ট ( নূন্যতম ১৮ মাস মেয়াদ)।
আবেদন ফি প্রদানের প্রমাণপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আগে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। একজন শিক্ষার্থী ইএমজিএসের (এডুকেশন মালয়েশিয়া গ্লোবাল সার্ভিস) মাধ্যমে অনলাইনে ভিসার আবেদন করতে হয়। এটি সাধারনত বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজই আবেদন করে থাকে। (ইএমজিএস হলো মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অংশ, যা মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইএমজিএস মালয়েশিয়ার সরকারি ও বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সেবা প্রদানে ওয়ান-স্টপ সেন্টার হিসেবে কাজ করে।)
আবেদনকারীকে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি প্রদান করতে হয়, যেটি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রামের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার তারিখ থেকে ১৪ কার্যদিবস পর ভিসা অনুমোদনপত্র প্রদান করা হয়। প্রক্রিয়াধীন সময়টিতে শিক্ষার্থীরা আবেদনের সর্বশেষ অবস্থাটিও অনলাইনে জেনে নিতে পারেন। তবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পূর্বে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ই-ভিসার প্রয়োজন হবে। শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই অনলাইনে ই-ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন, যা মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাওয়া যায়।
মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর প্রথম মাসেই কিছু কাজ জরুরিভাবে করে নিতে হবে। প্রথম সাত দিনের মধ্যে যেকোনো ইএমজিএস- নিবন্ধিত ক্লিনিকে মেডিকেল স্ক্রিনিং করে নিতে হবে। আবাসনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি শিক্ষাগত নথিগুলো সঠিকভাবে রয়েছে, তা নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইএমজিএসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্টুডেন্ট পাস (পাসপোর্টে স্টিকার) এবং আই-ক্যাড (বিদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র) সংগ্রহ করে নিতে হবে। স্টুডেন্ট পাস মূলত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাসপোর্টে একটি স্টিকার সংযুক্ত করে দেবে। আর আই-ক্যাড হলো মালয়েশিয়ার বহিরাগত শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র, যার মাধ্যমে তাদের মালয়েশিয়ায় থাকার বৈধতা নিশ্চিত হয়।
প্রত্যেক মানুষের খরচগুলো মূলত তার ব্যক্তিগত জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করে। তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় স্থানীয় গোষ্ঠীর সংস্কৃতির সঙ্গে তিনি কতটুকু মানিয়ে চলতে পারছেন। মালয়েশিয়ায় থাকা-খাওয়া, যাতায়াত, মেডিকেল, মুঠোফোন ও ইন্টারনেট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট; সব মিলিয়ে প্রায় ১০০০ থেকে ১৫০০ রিংগিত খরচ হতে পারে।
মালয়েশিয়ার বাইরের থাকা আসা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ পুষিয়ে নেওয়া জন্য আছে ঋণ, টিউশন ফি মওকুফ, শিক্ষা তহবিলসহ নানা অনুদানের ব্যবস্থা । জনপ্রিয় স্কলারশিপগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া সরকারি স্কলারশিপ, মালয়েশিয়া কমনওয়েলথ স্কলারশিপ, ফেলোশিপ প্ল্যান এবং মালয়েশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ অন্যতম। তা ছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য নিজস্ব বৃত্তি, অনুদান ও টিউশন মওকুফের কার্যক্রম চালু আছে।
মালয়েশিয়ার বিদেশি শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের প্রথম ধাপ হলো প্রথমেই একটি চাকরির ব্যবস্থা করা। এ ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা কর্মচারীর পক্ষ থেকে তার ওয়ার্ক পারমিটের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এটি ইমপ্লয়মেন্ট পাস নামেও পরিচিত, যার মেয়াদ থাকে সর্বনিম্ন ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ৫ বছর। এ ছাড়া ওয়ার্ক পারমিটের আবেদনের সময় পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ১৮ মাস থাকা বাঞ্ছনীয়।
মালয়েশিয়ায় পড়ালেখার জন্য ফ্রী পরামর্শ ও ভর্তি, ভিসার আবেদন করতে এক্সিওম এডুকেশন এন্ড ইমমিগ্রেশন এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এক্সিওম মালয়েশিয়ার ৫৬ টিরও অধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে ২০০৩ সাল থেকে, ২০০০ এর বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে ফ্রী মালয়েশিয়ায় উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরনে সহায়তা করেছে। এক্সিওম ,আনাম র্যাংগস প্লাজা, সাত মসজিদ রোড: ৬/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা। যোগাযোগ: 01714100647